পর্তুগীজ কলোনিভুক্ত আফ্রিকান দেশ মোজাম্বিক স্বাধীন হয় ২৫ জুন ১৯৭৫ এ…স্বাধীনতার জন্য দীর্ঘ সংগ্রামে লিপ্ত ছিলেন মোজাম্বিকের মুক্তিকামী জনগণ।ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদ আর তার প্রভু মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীদের সাথে অবিরাম লড়াইয়ে মোজাম্বিকের জনগণকে সাহায্য নয় বরং তৎকালীন বিশ্বকে দর্শকের ভূমিকায় দেখা যায়।
ব্যাতিক্রম ছিল শুধু একজন ব্যাক্তি, একটি দেশ।কমরেড ফিদেল কাস্ত্রো ও তার কিউবার জনগণ। মোজাম্বিক স্বাধিকার আন্দোলনের যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ, অস্ত্র সহ সব রকমের লজিস্টিক সাহায্য দেয় কিউবা। যুদ্ধ পরিস্থিতিতেও হাজার হাজার মোজাম্বিক নাগরিকের উচ্চতর শিক্ষার ব্যাবস্থা করেন ফিদেল ও তার জনগণের কিউবা। ২০,০০০ মোজাম্বিক নাগরিক বিভিন্ন বিষয় ও কারিগরিক শিক্ষা গ্রহণ করে স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিদ্ধস্ত মোজাম্বিক পুর্নঃনির্মাণে অংশ নেন। বিভিন্ন সাহায্যের প্রয়োজনে ১৯৭৭ থেকে ১৯৮১ পর্যন্ত কয়েকবার কিউবা সফর করেন মোজাম্বিক রাষ্ট্রপতি Samora Machel । কিউবার অকৃত্রিম আতিথেয়তায় সিক্ত হয় মোজাম্বিক।
৭৫ এর স্বাধীনতার পর মোজাম্বিকে দেখা দেয় ম্যালেরিয়ার মহামারী।সারা মোজাম্বিকে মাত্র ২০ জন ডাক্তার জীবিত ছিলেন । “লা কমাদান্তের ” নির্দেশে কিউবান ডাক্তার দল মোজাম্বিকের চিকিৎসা ব্যাবস্থা পুর্নঃগঠন করেন। এখোনো অসংখ্য কিউবান ডাক্তার বিষয়ভিত্তিক পাঠ শেষে বিনামূল্যে মোজাম্বিকে প্র্যাকটিস করে থাকেন।
এসবের পরেও কিউবা মোজাম্বিকের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা বা মোজাম্বিকের সার্বোভৌমত্বের ওপর কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করে নি।মোজাম্বিকের সাথে অস্বাভািবক কোন চুক্তি/লেনদেন এ দেখা যায়নি কিউবাকে।অর্থাৎ মোজাম্বিক শোষণমুক্তি ও স্বাধিকার আন্দোলনে কিউবার অংশগ্রহণ ছিল নিঃস্বার্থ । সমাজতান্ত্রিক পররাষ্ট্রনীতির উদাহরণ এর চেয়ে ভাল আমার জানা মতে দ্বিতীয়টি নেই।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সাহায্যকারী দেশ ভারত আদতে তার রাজনৈতিক স্বার্থেই বাংলাদেশকে ১৯৭১ এর যুদ্ধে সহায়তা করেছে, এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সম্পদ সংগ্রহ সহ সকল ধরণের নীতিনির্ধারণী বিষয়েও তার আধিপত্য বজায় রেখেছে। এমনকি ভারতের ক্ষমতাসীন দলের কেউ কেউ বাংলাদেশ দখলের মত প্রবল সাম্রাজ্যবাদী হুমকিও দিচ্ছেন।
বাংলাদেশ বিগত ৪৭ বছরে সুষ্ঠু নির্বাচনী ব্যাবস্থা প্রণয়নের মত সক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি।যার কারণ বিগত ক্ষমতাসীন দলগুলোর লুটপাটের শাসন,অর্থনীতি চলমান রেখে ক্ষমতায় বসে থাকার নিমিত্তে নির্বাচনী ব্যাবস্থাকে কলুষিত করা। এবং কলুষিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন হয়ে মসনদ টিকিয়ে রাখতে তারা সকলেই আশ্রয় নেয় নতজানু পররাষ্ট্রনীতির এবং বিদেশী শক্তি তথা ভারত, মার্কিন আগ্রাসনবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তির।কিছু কিছু ক্ষেত্রে চীন ও রাশিয়াকেও এই দৃশ্যপটে উপস্থিত দেখা যায়। এবং স্বভাবতই এসব শক্তি তাদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষায়,কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় কলুষিত নির্বাচনী ব্যাবস্থারই লালন-পালন বহাল রেখেছে। এবং দলগুলো লুটপাটের স্বার্থে বহাল রেখেছে দুঃশাসন, স্বৈরশাসন।
দেশের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা, সার্বভৌমত্ব, সুষ্ঠু পররাষ্ট্রনীতি সহ স্বনিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় তাই প্রয়োজন কিউবার ন্যায় সমাজতান্ত্রিক ব্যাবস্থার।
লেখক: তাহসীন মল্লিক
-সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা মহানগর