এম. মাহবুবুর রহমান নাজমুল, জেলা প্রতিনিধি, ভোলা।।
চরফ্যাশনে কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে ঋণ সুবিদা পাচ্ছেনা বেকার যুবক যুবতিরা। সুবিধা পাচ্ছে চাকুরিজীবি ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীরা। ফলে বেকার যুবক যুবতিরা সরকারি এই ঋণ সুবিধা না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালের আদম শুমারির তথ্য অনুযায়ি চরফ্যাশনের লোক সংখ্যা ৪লাখ ৫৬ হাজার ৪৩৭ জন। বেকার যুবকের সংখ্যা ১২হাজার ৮৭৩জন এবং ১২হাজার ৬১৯ জন রয়েছে বেকার যুবতি। ২০১৯ সালের পরিমসংখ্যানের (সম্ভাব্য) তথ্যানুসারের হিসাব মতে চরফ্যাশনের ৬লাখ ৩৯ হাজার ১২জন জনসংখ্যা। বেকার যুবক যুবতির সংখ্যা রয়েছে ৩৬ হাজার ৮৯ জন। তার মধ্যে যুবক হচ্ছে ১৮ হাজার ৪০ জন এবং যুবতি হচ্ছে ১৮হাজার ৪৯ জন।
কর্মসংস্থান ব্যাংকের তথ্যে জানা গেছে,২২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ১৩৭ জনকে ২কোটি ৫৪ লাখ ৬০হাজার টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ১৮২জনকে ৩কোটি ৬৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা ঋণ প্রদান করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বেকার যুবকরা এ কর্মসংস্থান ব্যাংকের অনিয়মের কথা তুলে ধরে বলেন, এখানে চাকুরিজিবী ও ব্যবসায়িরা ছাড়া কোনো বেকার-যুবক যুবতিগন কর্মসংস্থানে উৎসাহিত হওয়ার জন্যে কোনো ঋণ সুবিধা দেওয়া হচ্ছেনা। নামে-বেনামে মাছ চাষের পুকুর বা খামার ও কৃষি ক্ষেতসহ মুরগির খামার অথবা দোকান দেখিয়ে জমিজমার দলিল রেখে ঋণ সুবিধা নিচ্ছেন চাকুরিজিবী ও ছোট বড় বিভিন্ন শ্রেণির ব্যবসায়িরা।
এদের মধ্যে চরফ্যাশন বাজারের প্রতিষ্ঠিত কসমেটিক্স ব্যবসায়ি ইমন এ প্রতিবেদককে জানান, আমি আগস্ট মাসের ২তারিখে স্টাম্প ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক বাবদ ২হাজার ৫শ‘ টাকা খরচ করে বাজারের ঘর ভিটার দলিল রেখে ৪লাখ টাকা ঋণ নিয়েছি অন্য একটি ব্যবসার নাম দিয়ে। এছাড়াও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ি বলেন, আমি মুরগির খামার দেখিয়ে ও জমিজমার দলিল রেখে ঋণ নিয়েছি।
এক অনুসন্ধানে জানা গেছে চরফ্যাশনের বিভিন্ন চাকুরিজিবী পরিবারের সদস্যদের নামে এ প্রতিষ্ঠান থেকে লাখ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। চরফ্যাশন সরকারি কলেজের প্রভাষক মহিউদ্দিন কাজী বলেন, আমি ঋণের জন্য কর্মসংস্থান ব্যাংকে গেলে আমাকে ঋণ প্রদান না করে জিন্মাদার (গ্রান্টেড) রেখে তার স্ত্রীর নামে ঋণ দেয়া হয়েছে। তা প্রতিমাসে পরিশোধ করছি। চরফ্যশনের শিক্ষিত বেকার ও শিশু শ্রমিকদের পিতামাতাদের অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘোষণা অনুযায়ী জামানত ছাড়া শিক্ষিত বেকারদের শিক্ষাগত যোগ্যতার মূল সনদ (সার্টিফিকেট) রেখে এবং ঋণ সুবিদা দেওয়ার কথা থাকলেও শিক্ষিত বেকার যুবক যুবতিরা ও শিশু শ্রমিকদের পিতা মাতাসহ প্রকৃত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ি বা বেকাররা ঋণ সুবিধা পাচ্ছেনা। একাধিক ঋণ গ্রহীতা বলেন, এটা ব্যাংকের কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে। তারা কোন বেকারকে ঋণ না দিয়ে কৌশল করে চাকুরীজীবী ও ব্যবসায়ীদেরকে ঋণ দিচ্ছে আর বলে বেড়ায় আমরা বেকারদেরকে ঋণ দিচ্ছি।
এদিকে বেকার যুবক যুবতিদেরকে ঋণ প্রদান না করায় চরফ্যাশনে কর্মসংস্থান সৃষ্ঠিতে বেঘাত ঘটার আশংখা দেখা দিয়েছে। এই সকল বেকারগন সরকারি সুযোগ সুবিধা না পেয়ে যুবক-যুবতিরা বেকারের ফলে মাদক, চুরি, জুয়াসহ নানান অপরাধ কর্মকান্ডে ঝুঁেক পড়েছে বলে অভিজ্ঞমহলের ধারণা।
চরফ্যাশন, লালমোহন ও মনপুরা এ ৩ উপজেলা এরিয়ার এ কর্মসংস্থান ব্যাংকের কার্যক্রম। এ বিষয়ে কর্মসংস্থান ব্যাংক চরফ্যাশন শাখার ব্যবস্থাপক সজল কুমার দেবনাথ বলেন, আমরা কোনোও চাকরিজিবীদের ঋণ দেইনা তবে তাদেরকে গ্রান্টেড হিসেবে রাখা হয়। সজল কুমার আরোও বলেন, আমরা এ ব্যাংক থেকে বেকার ও অর্ধ বেকারদের ঋণ দিয়ে থাকি, প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়িদের কিভাবে ঋণ দিয়েছেন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, যেসব ব্যবসায়িরা ঋণ নিয়েছেন তারা অনেক আগ থেকেই আমাদের কাছ থেকে ঋণ সুবিধা নিচ্ছেন । আমাদের এরিয়াতে কয়েক হাজার বেকার আছে তাই বলে সবাইকে আমরা ঋণ দিতে পারিনা আমাদের এটা অবশ্যই দেখতে হবে সে ঋণ পরিশোধ করতে পারবে কিনা। আমরা উৎপাদনশীল ও সেবামুলক খাত থেকে ১১% ও ক্ষুদ্র ব্যবসা ঋণে ১৩% হারে সুদ নিয়ে থাকি।